সেকেন্ড টাইম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি

DARE TO DREAM BIG

   নামের সামনে ডাক্তার বসাতে হলে সবার আগে যেই বাধা পার করতে হবে তা হচ্ছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। বলাটা একটু সহজ হলেও করাটা কিন্তু অতটা সহজ নয়। তবে অসম্ভব ও নয়। কারণ যদি সহজ হতো তাহলে সবাই পারতো। এই থিওরী টা যেকোনো কিছুর জন্য। শুধু মেডিকেল নয়, জীবনের সবকিছুতেই। 

এইচ.এস.সি এর পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন এর জন্য কিছু রিকোয়ারমেন্ট বা যোগ্যতা লাগে। অর্থাৎ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন এর জন্য ন্যূনতম যা দরকার তা থাকা লাগবে। 


মেডিকেল পরীক্ষার জন্য SSC ও HSC দুই পরীক্ষায় মোট জিপিএ ১০ এর মধ্যে ৯ থাকা লাগবে। কেবল তাহলেই পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে। 

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধা মূল্যায়ন করা হবে মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে। ১০০ নম্বরের MCQ test, আর বাকি ২০০ নম্বর আসবে SSC ও  HSC এর জিপিএ থেকে। এক্ষেত্রে SSC gpa (৫ *১৫) = ৭৫ নম্বর এবং HSC GPA (৫ * ২৫) = ১২৫ নম্বর। ৭৫+১২৫=২০০ (এই হচ্ছে ২০০ নম্বর  যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে HSC এর জিপিএ) ।
তার মানে মোট জিপিএ ১০ এর মধ্যে ৯ থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা গেলেও  চান্স পাওয়া প্রায় অসম্ভব । 



এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ এক জাতি আছে যারা সেকেন্ড টাইমার নামে পরিচিত 😉। ভর্তি পরীক্ষায় তাদের কাছ থেকে কিছু নম্বর ডোনেট নেয়া হয়। অর্থাৎ সেকন্ড টাইমার হওয়ার কারনে তাদের মোট ৩০০ নম্বর থেকে অতিরিক্ত ৫ নম্বর কেটে নিবে, যা ফার্স্ট টাইমার থেকে কাটা হবে না। 
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে যেহেতু দশমিক নম্বর ও হিসেব করা হয় সেখানে ৫ নম্বর কিন্তু বিশাল একটা ব্যাপার, কিন্তু প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সেকেন্ড টাইমার হওয়াতে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সময় পাওয়া যায় আর সিলেবাস আগে থেকেই শেষ থাকে বেশিরভাগ সেকেন্ড টাইমার দের।

এই ব্লগে সেকেন্ড টাইমারদের যাবতীয় সমস্যা ও তার  সমাধানের সব কিছু তুলে ধরা হয়েছেঃ 

 সেকেন্ড টাইম প্রস্তুতি নেয়ার সময় একজন শিক্ষার্থী যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলো -


  • আত্মবিশ্বাসে দূর্বলতা  (Weak Confidence):  একজন সেকেন্ড টাইমার এর ক্ষেত্রে মাথার মধ্যে সর্বপ্রথম যেই চিন্তাটা আসে তা হচ্ছে ৫ মার্কস কম ( যাদের জিপিএ কম তাদের আরো বেশি মার্কস কাটবে) নিয়ে আমি কি মেডিকেল এ চান্স পাবো?   এই দূর্বল আত্মবিশ্বাস এর কারনেই ভর্তি যুদ্ধে অনেকে পিছিয়ে পরে। যেভাবেই হোক নিজের পোটেনশিয়াল ও আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে।  কনফিডেন্স বাড়ানোর জন্য সবসময় মটিভেটেড থাকা লাগবে। রেগুলার মটিভেশনাল বা ইন্সপাইরেশন মূলক বক্তব্য বা বাণী শোনা এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজে দেয়। And one important thing is , STOP THINKING YOURSELF AVERAGE. কারণ তোমাকে কম মার্কস নিয়ে মেডিকেল এ চান্স পেতে হবে। হতে পারে তোমার ১০ , ১৫ বা আরো বেশি নম্বর কাটা যাবে। But doesn't matter. DARE TO DREAM BIG.   
  • ডিপ্রেশন বা হতাশা (Depression & Frustration): সেকেন্ড টাইমার দের যেই জিনিশটা সবচেয়ে বেশি গ্রাস করে তা হচ্ছে ডিপ্রেশন বা হতাশা। ডিপ্রেশন নামক এই অস্বাভাবিক কাল্পনিক বস্তুটা সেকেন্ড টাইমার দের জন্য স্বাভাবিক। এমন কোনো সেকেন্ড টাইমার নেই যে ডিপ্রেশন এ থাকে না। So, You have to fight against this Depression technically. প্রথমে খুজে বের করতে হবে কোন কোন কারণে তুমি ডিপ্রেশন এ আছো। ব্যাক্তি অনুযায়ী কারণগুলো ভিন্ন হতে পারে। তবে সবার মধ্যে সাধারণ কিছু ফ্যাক্ট হচ্ছেঃ  ১) সহপাঠী বা বন্ধুরা ভালো ভালো মেডিকেল , বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেয়ে ক্লাস করতেছে, প্রাত্যাহিক জীবনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে। সেগুলো দেখে তোমার খুব খারাপ লাগে, কারণ তুমি এখন ও ইন্টারমিডিয়েট ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী (I CAN FEEL THIS BRO) . ২) সবার বাবা মা তাদের সন্তান দের নিয়ে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখেন।তাদের নিজেদের জীবনের অপূর্ণ স্বপ্ন গুলো ও সন্তান দের দিয়ে পূর্ণ করতে চান। আর তার জন্যই আমাদের মধ্যে তারা এত ইনভেস্ট করেন। আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্য তারা অনেক স্যাক্রিফাইস করেন।  আর আমরা যখন এটা অনুভব করতে পারি এবং বুঝতে পারি যে বাবা মা কে কিছুই দিতে পারলাম না, তখন ই হতাশা টা কাজ করে। অনেকের ক্ষেত্রে পড়ার টেবিলে বসলে বা বই খুললেই সকল প্রকার চিন্তা, ভয়, হতাশা কাজ করতে শুরু করে দেয়। অল এন্ড এভারেজ এরকম টাই হয় সবার ক্ষেত্রে। হয়ত ইন্ডিভিজোয়ালি আরো কিছু কারণ থাকতে পারে।   যাই হোক , হতাশ হওয়া যাবে না। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখতে হবে। মোটিভেটেড থাকতে হবে সবসময়। আর বন্ধুবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় , মেডিকেল এ পড়ালেখা করছে তো কি হয়েছে, তুমি যদি সঠিক ভাবে পরিশ্রম কর, তাহলে তুমি আরো ভালো অবস্থানে যেতে পারবে অবশ্যই। মনে রেখো বাঘ বা সিংহ অনেক বেশি ক্ষুধার্ত হলেও শিকার এর জন্য অপেক্ষা করে, কিন্ত উচ্ছিষ্ট বস্তু দিয়ে পাকস্থলী পূর্ণ করবে না। So, STAY HUNGRY FOR THE BEST, Don't be satisfied with normal.
  • সঠিক গাইডলাইন ঃ (Proper Guideline):  সেকেন্ড টাইমারদের আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সঠিক গাইডলাইন। অর্থাৎ সবসময় একটা ট্র্যাক এ থাকার জন্য একটা গাইডলাইন খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে যারা কোচিং করে তারা কোচিং এর গাইডলাইন অবশ্যাই ফলো করবে। কারণ যাদের এক্সপেরিয়েন্স বা অভিজ্ঞতা আছে কেবল তারাই তোমাকে ভালো গাইড করতে পারবে। তাছাড়া পরিবারে বড় ভাই-বোন থাকলে বা যেকোনো এক্সপেরিয়েন্সড কারো কাছ থেকেও রেগুলার গাইডলাইন নিতে পারো। আর বর্তমানে ইন্টারনেট তো আছেই। যেকোনো প্রশ্নের ঝটপট উত্তর পেয়ে যাবা। যাই হোক , গাইডলাইন  অবশ্যই অনুসরন করার চেষ্টা করবে। 
  • আনসাপোর্টেড পরিবেশ (Unsupported Environment): আনসাপোর্টেড পরিবেশ মানে হচ্ছে, তুমি যা করতে যাচ্ছো বা অর্জন করতে যাচ্ছো তার জন্য সার্বিক পরিবেশ টা উপযুক্ত কিনা ? এমন কোনো সেকেন্ড টাইমার নেই যে কখনও সমাজ বা পরিবার বা বন্ধুবান্ধব এর কাছ থেকে অবহেলা বা অপমান অনুভব করে নি। সেকেন্ড টাইম প্রস্তুতি চলাকালীন সময়ে যদি তোমার পরিবেশ  এরকম মানুষ বা বস্তু দিয়ে ভরপুর থাকে তাহলে সেটা তোমার লক্ষ্যে ব্যাঘাত ঘটাবে। তার জন্য তোমাকে তোমার পরিবেশটা তোমার  GOAL SUPPORTED করে তৈরী করে নিতে হবে। একটা বই সাজেস্ট করতে পারি তোমাকে , সম্ভব হলে পড়ে নিও অথবা ইন্টারনেট এ সারমর্ম দেখে নিও। বইটির নাম হচ্ছেঃ THE SUBTLE ART OF NOT GIVING A F*** . যারা তোমাকে তোমার লক্ষ্য অর্জনে বা স্বপ্ন পূরণে সাপোর্ট করবে না তাদেরকে এভয়েড করো আর যারা লক্ষ্য পূরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাধা দিবে তাদেরকে মনে মনে বলে দিও "I Don't Give A ****"   নিজের পড়ার ঘরের পরিবেশটা সুন্দর করে সাজাও যেন মনে হয় তুমি একটা মিশনে আছো। পড়ালেখার মিশন। মিশন ফর এ বেটার লাইফ।
                              
  • প্রস্তুতির পদ্ধতি (Method of Preparation or STUDY): আমার তো অনেক কিছুই পড়া আছে , আবার অনেক কিছুই পড়া নেই ,কিভাবে পড়াশোনা করব? যেহেতু তুমি একজন সেকেন্ড টাইমার, ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন তোমার অবশ্যই জানা আছে । জীববিজ্ঞান =৩০, রসায়ন = ২৫, পদার্থবিজ্ঞান = ২০, ইংরেজি = ১৫, সাধারণ জ্ঞান = ১০ । মোট ১০০। তোমার হাতে যতটুকু সময় আছে সেই সময়ের মধ্যে ১০০ নম্বরের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে যেন তোমার মাইনাস মার্ক কভার হয়ে যায়। এখন তোমাদের প্রশ্ন যেটা থাকে তা হচ্ছে , কিভাবে পড়ব , কতক্ষন পড়ব ইত্যাদি। আমার এক কথার উত্তর হচ্ছে তোমাদের সবার জন্যই ২৪ ঘন্টা ফিক্সড । কারো জন্য বেশি বা কম না। স্বাভাবিক ভাবেই তোমাদের মধ্যে যারা এই ২৪ ঘন্টার বেস্ট ব্যবহার করবে তারাই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করবে। আর তুমি যেহেতু সেকেন্ড টাইমার, তোমার যেহেতু অতিরিক্ত নম্বর কাটা যাবে তারপর ও তুমি নিজেকে কিভাবে এভারেজ ভাবো? তুমি যেহেতু অন্যদের থেকে কম মার্কস নিয়ে মেডিকেলে চান্স পেতে চাও , তার  মানে তুমি এক্সসেপশনাল কিছু অর্জন করতে চাও। স্বাভাবিক ভাবেই তোমাকে এক্সসেপশনাল কিছু করতে হবে  অন্যদের থেকে বেশি। তা নয় কি? অতএব তোমাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনার মধ্যে রেগুলার হওয়া লাগবে। তোমাদের সুবিধার্থে একটা ডেমো দিতে পারি যে কিভাবে পড়বে;      "" যেহেতু তোমরা সেকেন্ড টাইমার, তোমাদের অধিক লোড নেয়ার ক্ষমতা আছে আশা করি। আর অধিক লোড অবশ্যই নিতে হয়।   তোমাদের প্রাণীবিজ্ঞান সম্পূর্ণ  বইটা ৩ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে রিভিশন দেয়া যায়। উদ্ভিদবিজ্ঞান বই ও ৩ দিনের মধ্যে একবার রিভাইস দেয়া যায়। মেডিকেল এর জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বলতে গেলে একদম ব্যাসিক থেকে আসে। জাস্ট ইম্পরট্যান্ট টপিক পড়লে রিভাইস দিলেই হয়। এটা রিভাইস দিতে ২ দিন ও লাগবে না। আর রসায়ন ১ম ও ২য় পত্র মিলে ৪ দিনে রিভাইস দেয়া যায়।  যারা কোচিং করো না কোথাও তারা প্রত্যেক দিন ২ ঘন্টা  সব বিষয় এর রেগুলার পড়া পড়বা। আর বাকি সময় একটা স্পেসিফিক বিষয় রিভাইস দিবে।  আর যারা কোচিং করো তারা কোচিং এর গাইডলাইন ফলো করতে পারো বা এখানে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে পড়তে পারো টাইম ম্যানেজ করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বেশি করে রিভিশন দেয়া ও  প্রচুর এক্সাম প্রাক্টিস করা। "" 
আশা করি সেকেন্ড টাইমার রা অনেক কিছুর সমাধান পেয়েছে। কোনো কিছু ভুল মনে হলে অবশ্যই কমেন্টে বা মেসেজ এর মাধ্যমে অবগত করবে। আর যদি মনে হয় তোমাদের মনের কথাগুলোই এখানে লিখেছি তাহলেই এত কষ্ট করে লেখাটা সার্থক। অন্যথায় তোমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

               -- SYED FAYSEL AHAMMAD RAJO


For further discussion

4 Comments

  1. Thank you. Best one

    ReplyDelete
  2. একবার পরীক্ষায় ফেল করলে আবার 2nd টাইম দেওয়ার সুযোগ আছে কি? দয়া করে জানাবেন

    ReplyDelete
Previous Post Next Post